পঞ্চগড়-১: জমিরউদ্দিন সরকারের খাস তালুকে ভাগ বসাতে পারবে এনসিপি?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৭ জুলাই ২০২৫, ০০:৫৫
অ- অ+

গেল মে মাসের শেষ সপ্তাহ। উত্তরের জেলা পঞ্চগড় গেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির ((এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। সঙ্গে শতাধিক গাড়ির বহর। নির্বাচনী শো-অফ করেছেন তিনি। নিজের জন্মস্থান পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা। সেখান থেকে সংসদ নির্বাচন করবেন সারজিস আলম। তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী ও সদর উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড়-১ আসন।

সারজিস আলমের গাড়িবহর নিয়ে গণমাধ্যমে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। এই গাড়িবহরের টাকা তিনি পেলেন কোথায়? এর ব্যাখ্যায় নিজের দাদার সম্পত্তির কথা বলেছেন সারজিস আলম। বলেছেন বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতার কথা। কিন্তু এরপরও নিজের দল আর বাইরে তার অর্থের উৎস নিয়ে সমালোচনা বন্ধ হয়নি। এখনো সময় সময় ফিরে আসে সেই সমালোচনা। সুযোগ পেলেই টানা হয় সারজিসের রাজনৈতিক অতীত। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের মাঝারি পর্যায়ের নেতা ছিলেন সারজিস আলম।

তো, একদল সারজিস আলমের রাজনৈতিক অতীত আর বর্তমান অর্থের উৎস নিয়ে সমালোচনা করেন। আরেক দল বসেছেন ভোটের হিসাব-নিকাশে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেমন করতে পারেন সারজিস? কারণ তার প্রতিপক্ষ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার নওশাদ জমির।

সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে মনে আছে? এখনো তিনি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য। তারই ছেলে নওশাদ জমির বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। বয়সজনিত কারণে ভোটের রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। নিজের পাশাপাশি বিএনপিরও উত্তরাধিকার করেছেন ছেলে নওশাদকে।

আগামী নির্বাচনে সারজিস আলম ও নওশাদ জমির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে কেমন হতে পারে ফলাফল? বিগত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে তার একটা ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছে ঢাকা টাইমস। সেই বিশ্লেষণই তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন ধরা হয় ১৯৯১ সালের ভোটকে। সেই পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন জিয়াউর রহমান আমলের স্পিকার মির্জা গোলাম হাফিজ। প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন তিনি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সিরাজুল ইসলাম, পেয়েছিলেন ৩১ দশমিক পাঁচ শতাংশ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী পেয়েছিলেন প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ ভোট।

আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টির বাইরে এই এলাকায় তখন প্রভাবশালী ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধান। তিনি পেয়েছিলেন প্রায় ১৫ শতাংশ ভোট। সেবার জামায়াতে ইসলামী এই আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। ফলে বলা যায়, জামায়াতে ইসলামীর ভোট পেয়েছেন বিএনপির মির্জা গোলাম হাফিজ।

এই ফলাফল থেকে বোঝা যায় পঞ্চগড়-১ আসনের বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে নির্বাচনে জিততে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায় জাতীয় পার্টি, জামায়াত এবং শফিউল আলম প্রধানের ভোট। এই তিন পক্ষের যেকোনো এক পক্ষের সমর্থন পেলে হিসাব-নিকাশ উল্টে যায়।

এর প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। সেবার সেখানে প্রার্থী দিয়ে এককভাবে নির্বাচন করে জামায়াতে ইসলামী। ফলে তাদের ভোট আর বিএনপির দিকে যায়নি। সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। প্রায় ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি নির্বাচিত হন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভোট ছিল ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রথমবার অংশ নিয়ে জামায়াতের প্রার্থী পেয়েছিলেন ১০ শতাংশ ভোট, আর জাতীয় পার্টির সাথে জোটের প্রার্থী হিসাবে শফিউল আলম প্রধান পেয়েছিলেন ২৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ ভোট।

এরপর থেকে আর কখনো জামায়াতে ইসলামী এককভাবে নির্বাচন করেনি। বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ ছিল তারা। ২০০১ সালে জোটের প্রার্থী হিসাবে বিএনপির ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার আবার জয়লাভ করেন। সেবার পেয়েছিলেন প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ভোট ছিল ৩৪ দশমিক তিন শতাংশ। এবার জাতীয় পার্টির সাথে জোটবদ্ধ জাগপার শফিউল আলম প্রধান পেয়েছেন প্রায় ২৫ শতাংশ ভোট।

২০০৮ সালে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ নির্বাচন করায় জাতীয় পার্টি ও জাগপার প্রায় পুরো ভোট গেছে নৌকার বাক্সে। ফলে ৫৮ দশমিক সাত শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। অন্যদিকে প্রায় ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকেন বিএনপির ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।

বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও পঞ্চগড়-১ আসনে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার প্রার্থী হননি। সেবার বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন তার ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। আগের রাতেই শেষ করে ফেলা সেই কলঙ্কময় নির্বাচনেও নওশাদ জমির ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিলেন।

এসব ফলাফল বিশ্লেষণে ইঙ্গিত মেলে সারজিস আলমের ভোটের ভবিষ্যৎ। আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলে সেই ভোট তার বাক্সে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অতীতে নির্বাচন না করায় নিজের ব্যক্তিগত ভোটও প্রায় নেই। সারজিস আলমকে জয় পেতে জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও নিজ দল জাতীয় নাগরিক পার্টির ভোট এক করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টির জোট হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই।

তাই সারজিস আলমের ভোটের ভাগ্যও অনেকটা অনিশ্চিত। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় প্রায় ফুরফুরে মেজাজে নওশাদ জমির।

এখন দেখার বিষয়- নির্বাচনের আগের সময়গুলোতে বিএনপি তথা নওশাদ জমির তাদের ভোট ব্যাংক বজায় রেখে কতটা নতুন ভোট ধরতে পারে, আর এনসিপি তথা সারজিস আলম প্রথমবারের মতো কত ভোটারের সাড়া পান।

(ঢাকাটাইমস/৭জুলাই/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
তেজগাঁও বিভাগে বিশেষ অভিযান: চিহ্নিত ছিনতাইকারীসহ ৪১ জন গ্রেপ্তার
সিআইডির এসপি ও ডিএমপির পরিদর্শক পরিচয়ে ৬০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির চেষ্টা, গ্রেপ্তার ২
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হিন্দু আইন’ নিয়ে দিনব্যাপী সেমিনার
শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদ বানাতে কাজ করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়: ভিসি আমানুল্লাহ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা